L O A D I N G

প্রসঙ্গ: কানাডা ( আমাদের দুটি কথা )

ইদানিং ফেসবুক আর ইউটিউব খুললেই চোখে পড়ে – কানাডা নিয়ে শত শত নেতিবাচক খবর | কানাডায় জব নেই, বাসা ভাড়া বেশী, ফেইক ড্রিম সেলার , জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া ইত্যাদি ইত্যাদি !

এখন যদি কানাডা গভর্নমেন্ট আপনাকে বলে – আপনি যখন কানাডা দেশটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন , তখন কি আপনি জানতেন না এই দেশের জিডিপি ৫১,৯৮৭ ইউএস ডলার পার ক্যাপিটা ! আপনি যাচ্ছেন মাত্র ২,৪৫৭ ডলার জিডিপি দেশ থেকে ? সবকিছুতেই তো পঁচিশ গুন্ কম্পিটিশন থাকবে | কানাডা সরকার তাদের কোনো একটা অফিসিয়াল পেইজে কি লিখেছে , আপনি আসুন , আপনার লেখাপড়া চলাকালীন পার্ট-টাইম ফুল-টাইম জবের গ্যারান্টি আমরা দিচ্ছি ! একটা লাইন দেখাতে পারবেন ? কিংবা কানাডা সরকার কোথাও কি বলেছে , আপনি আসলে জিনিস পত্রের দাম কমিয়ে ফেলবো, বিশ্বের অবস্থা যাই হউক ! আপনি আসলে বাড়ি ভাড়া কমিয়ে ফেলবো , আপনার শুভ আগমনে ! তাদের প্রতিটা লাইনে কিছু রুলস , কিছু ইন্সট্রাকশন , কিছু নির্দেশ , কিছু আইনি বাধ্য-বাধকতার কথা লেখা আছে | আপনি ইচ্ছে করলে সপ্তাহে বিশ ঘন্টা কাজ করতে পারবেন, চাইলে এখন ফুল-টাইম ও পারবেন | আপনার বাসা বা থাকার ব্যবস্থা আপনি নিজেই করবেন | সবকিছুই আপনি পারবেন , ” যদি ” শব্দটা থাকে ! তার মানে যদি আপনি পান , তাহলে !

আপনি ভিসা আবেদনের সময় ফিনান্সিয়াল এফিডেভিটে উল্লেখ করেছেন যে , আপনি কানাডা আসলে আগামী চার বছর কিংবা দুই বছর টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া-হাতখরচ বাবদ সকল খরচ নিজে নিজেই স্পন্সরের মাধ্যমে চলতে পারবেন , সেই ডিক্লেয়ার দিয়েছেন এবং তাঁরা সেগুলো বিশ্বাস করে আপনাকে চার বছর কিংবা দুই বছরের ভিসা দিয়েছে | আপনি এখন সেখানে গিয়ে দুনিয়ার সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছেন , কানাডাকে ফেইক ড্রিম সেলার বলছেন , জব নাই বলে ছবি তুলে পোস্ট দিচ্ছেন , জিনিস-পত্রের দাম বেশী বলে লম্বা ইতিহাস লিখে ফেসবুক গরম করে ফেলছেন ….কেন ? আমাদেরকে একটা লাইন দেখান , যেখানে কানাডা সরকার বলেছে , আপনি কোনোমতে চলে আসুন, আমরা আপনার সকল সমস্যার সমাধান করবো | লেখাপড়া শেষে ইমিগ্রেট হওয়ার অপশন থাকা সত্বেও আপনি পড়াশোনা না করলে কিংবা লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরবেন , সেই নিশ্চয়তা না পেলে ভিসা পর্যন্ত্য রিফিউজ্ড করে দেওয়া হচ্ছে | তার মনে হলো – আপনি লেখাপড়া শেষে কানাডা থেকে কানাডার PR কিংবা পাসপোর্ট নেন, এটাই তো ভিসা অফিসার চান না ! সেইজন্য রিফিউজাল লেটারে অন্যতম কারণ থাকে — আপনি গেলে আর আসবেন না , আমি এই সিদ্ধান্তে মোটামুটি কনফার্মড !

তাহলে কি দাঁড়ালো ? কানাডায় নামা থেকে শুরু করে আগামী দুই-চার বছর থাকার জন্য আপনি কানাডা সরকারের কাছ থেকে কোনোকিছু প্রত্যাশা করা মানে আপনার আবেদনের তথ্যের সাথে নিজেকে হারিয়ে ফেলা | মাত্র তিন হাজার ডলার জিডিপির ধারক-বাহক দেশ থেকে গিয়ে আপনি রাতারাতি প্রায় বাহান্ন হাজার ডলারের জিডিপির দেশে গিয়ে বসে থেকেই সব পেয়ে যাবেন , এই ধরণের সস্তা চিন্তা-ভাবনা মনে হয় আমরা বাঙালিরা , ইন্ডিয়ানরা , পাকিস্তানী ও আফ্রিকানরা একটু বেশী ভেবে ফেলি | অন্য কোনো মহাদেশের লোকজন এতো ইজি কিছু পেতে চায় কিনা , আমাদের জানা নেই |

আপনার উদ্দেশ্য থাকবে – কেমন করে ঈর্ষণীয় রেজাল্ট করা যায়, নতুন কিছু আবিষ্কার করে , এক্সট্রা ক্যালিবার দেখিয়ে মিডিয়ার শিরোনাম হওয়া , আপনার লক্ষ্য থাকবে পড়াশোনা শেষে কেমন করে কর্পোরেট জবে ঢুকে নিজেকে এস্টাব্লিশড করা যায় ? পরিবার নিয়ে কেমন করে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে নিজেকে গড়ে তোলা যায় || আপনি সেইসবের ধারে কাছে না যেয়ে হাতে কি একটা প্রমো ক্যামেরা নিয়ে সারাদিন অলি-গলি ঘুরে ভিডিও করছেন, ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন , মানুষকে ডিমোটিভেট করছেন , খিস্তি-খেউর কি সব যা তা বলে যাচ্ছেন ??? কেন ? আপনি ভিসা আবেদনের সময় স্টাডি প্লানের সাতটি প্রশ্নের উত্তরে কি কি বাঘ-ভাল্লুক মারবেন লিখেছিলেন, মনে আছে ? সেই অবস্থান থেকে সরে এসে আপনাকে পিজা ডেলিভারি বয় হতে কে বললো ? আপনি তো ওয়ার্ক পার্মিট ভিসায় যাননি ? ইভেন আপনি খেয়াল করে দেখেন , ওপেন ওয়ার্ক পার্মিট ভিসাটা পর্যন্ত্য এমনভাবে দেওয়া যে, আপনি যদি আপনার স্পাউসের সাথে আসেন, যদি কিছু করে নিজের ক্যালিবার দেখাতে পারেন , আপনার জন্য অপশন ওপেন রইলো | কমপ্লিট ওয়ার্ক পার্মিট কিন্তু দেননি | কানাডিয়ানরা কিন্তু আমাদের চেয়ে এক হাজারগুন বুদ্ধি নিয়ে চলে , এটা মাথায় রাখবেন |

কানাডা এসে আপনি কিছু করতে পারেননি বলে আরেকজন এসে যে কিছু করতে পারবে না , আপনাকে কে বললো ? চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান ডক্টর অমিত চাকমা স্যার কি কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হন নি ? আপনি কি জানেন , কানাডাতে প্রায় ২০০ বাংলাদেশী প্রফেসরস আছেন, যাঁরা কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষকতা করছেন ? বিজনেসম্যান হিসেবে কিংবা ব্যাংকে , ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনে , মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে প্রচুর বাংলাদেশিরা সুনামের সাথে কাজ করছেন | এতো অধৈৰ্য হলে কি করে হবে ? আমরা এমন সব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট পাঠিয়েছি , যাঁদের কোনো ফেসবুক একাউন্ট পর্যন্ত্য নেই ( লিঙ্কেডিন ছাড়া ) ; তাঁদের এইসব আজাইরা কাজে সময় দেওয়ার মতো সময় হাতে নেই |

আপনি জেনে-বুঝেই কানাডাতে এসেছেন | স্বপ্ন আপনি দেখেছেন | কানাডা আসা হলো আপনার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ | কানাডিয়ান শিক্ষায়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো , নিয়ম-কানুনে নিজেকে গড়ে তুলুন | আপনি যদি আপনার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্য কোনো উপায়ে কানাডায় থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিজেকে বিল গেটস কিংবা মার্ক জুকারবার্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, সেটা ভিন্ন কথা | তবে আমরা বলবো — আগে নিজের যোগ্যতা ও দৌড়ানোর লেভেল এনালাইসিস করে তবেই যে কোনো দেশে যাবার জন্যে প্রস্তুতি নিন |

আমাদের সম্মানিত অভিভাবকদেরকে ও সবিনয়ে বলতে চাই – পুরো চার বছর কিংবা দুই বছরের টিউশন ফি দেওয়ার মতো যদি আপনার সামর্থ্য না থাকে , তাহলে অযথা নিজের প্রিয় সন্তানকে এতদূর দেশে পাঠাবেন না | প্লিজ , আমাদের এই অনুরুধটুকু রাখেন | এতে করে সকলের শান্তি | অযথা একটি দেশে পাঠিয়ে সন্তানকে ফাইনান্সিয়াল বিষয়ে চাপ দিয়ে ওর পড়ালেখার ক্ষতি করবেন না | এমনকি থাকা-খাওয়ার খরচ-ও যদি দিতে না পারেন , তাহলে-ও দয়া করে পাঠাবেন না | এখন সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থাই টালমাটাল | কানাডা এর বাইরে নয় | সেটা আবার সত্যিকারের কানাডিয়ানরা ঠিকই সামলে নিচ্ছে | কিন্তু আমি আপনি আপনার সন্তান তো কানাডিয়ান না ! পিউর বাংলাদেশী !

তাই অনুরুধ করবো – ফেসবুকে ছবি আপলোড করে, লম্বা-লম্বা গল্প লিখে , নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার না করে নিজেকে নীরবে নিভৃতে ডেভেলপ করুন | দেখবেন, কানাডা আপনাকে খুঁজে নিচ্ছে | — শা অ্যাডমিন ম্যানেজার

Leave a Comment