আমাদের অগণিত শুভানুধ্যায়ী , প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী , সম্মানিত অভিভাবক ও বিজনেস পার্টনারদের জানাচ্ছি পবিত্র জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা । ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাসকে সারাবিশ্বে পালন করা হয় ” জন্মাষ্টমী ” হিসেবে ।
জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণজন্মাষ্টমী (দেবনাগরী कृष्ण जन्माष्टमी) একটি হিন্দু উৎসব। এটি বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। এর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইত্যাদি।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। কৃষ্ণের জীবনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড (গান বা কীর্তন, গীতিনাট্য, নাট্য, যাত্রা ইত্যাদি) এর মাধ্যমে রাসলীলা, কংস বধ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করা হয়। মথুরা, বৃন্দাবন, মণিপুর ইত্যাদি স্থানে এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে করা হয়। রাস লীলায় কৃষ্ণের ছোট বয়সের কর্ম-কাণ্ড দেখানো হয়, অন্যদিকে, দহি হাণ্ডি প্রথায় কৃষ্ণের দুষ্টু স্বভাব প্রতিফলিত করা হয় যেখানে কয়েকজন শিশু মিলে উচ্চস্থানে বেঁধে রাখা মাখনের হাড়ি ভাঙতে চেষ্টা করে। এই পরম্পরাকে তামিলনাডুতে উরিয়াদি নামে পালন করা হয়। কৃষ্ণের জন্ম হাওয়ায় নন্দের সকলকে উপহার বিতরণের কাহিনী উদ্যাপন করতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পর বহু স্থানে নন্দোৎসব পালন করা হয়।
শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকি ও বাসুদেব এর সন্তান এবং হিন্দু ধর্মাম্বলীরা তার জন্মদিন জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় চারিদিকে অরাজকতা, নিপীড়ন, অত্যাচার চরম পর্যায়ে ছিল। সেই সময় মানুষের স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। সর্বত্র ছিল অশুভ শক্তির বিস্তার।শ্রীকৃষ্ণের মামা কংস ছিলেন তার জীবনের শত্রু। মথুরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সাথে সাথে সেই রাতে তার বাবা বাসুদেব তাঁকে যমুনা নদী পার করে গোকুলে পালক মাতা পিতা যশোদা ও নন্দর কাছে রেখে আসেন।
ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিল শুরু হয় ঢাকার আনুষ্ঠানিক নগরপত্তন(১৬১০ খ্রি) এরও পূর্বে। ১৫৫৫ সালে রাধাষ্টমীর সময় বংশাল এর নিকটে পিরু মুনশীর পুকুরের পাশে থাকা এক সন্ন্যাসী প্রথম বালক ভক্তদের হলুদ রঙের বসনে সাজিয়ে একটি মিছিল বের করেন। দশ বছর পর রাধাষ্টমীর পরিবর্তে কৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমীর নন্দোৎসবের সময় তাদের মিছিলের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ১৫৬৫ সালে প্রথমবারের মত জন্মাষ্টমীর মিছিল বের হয়। পরবর্তীকালে নবাবপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের উপর মিছিলের দায়িত্ব অর্পিত হয়। কালক্রমে মিছিলটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় এবং ঢাকায় জন্মাষ্টমী উদযাপনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। মুসলমানদের নিকট মিছিলটি ‘বার গোপালের মিছিল’ নামে পরিচিত ছিল।
কৃষ্ণদাস ও জন্মাষ্টমীর মিছিল
কৃষ্ণদাস ঢাকার নবাবপুরে লক্ষ্মীনারায়ণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং নবাবপুরের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির থেকে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করা শুরু করেন। মিছিলে একটি কাঠের মঞ্চে কৃষ্ণ বলরাম নন্দ যশোদা প্রভৃতির বিগ্রহ থাকতো। মিছিলে বিভিন্ন মানুষ গোপ ও ব্রজবাসী সেজে ঘোড়ায় বা মাটিতে থেকে নাচগানে মুখর থাকতেন। বৈষ্ণব বসুকবৃদ্ধগণ পীতবসন পরে মাল্যপরিহিত হয়ে খোল করতালের বাদ্যে হরিনাম কীর্তন করতেন। কৃষ্ণদাসের মৃত্যুর পর চারপায়া বিশিষ্ট কাঠের চৌকিতে বিভিন্ন অবতারের মূর্তি প্রদর্শিত হয়। ধীরে ধীরে মিছিলে পতাকা, নিশান, বন্দুক-বর্শা, বল্লম-ছড়িধারী পদাতিক প্রভৃতি যুক্ত হয়। ক্রমেই বিভিন্ন সাজসজ্জায় মিছিলের গঠন ও কলেবর বৃদ্ধি পায়।
ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিল পুরো বাংলায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। এই মিছিল দেখতে গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে শুরু করে কলকাতা শহর থেকেও মানুষ ঢাকায় আসত। দর্শনার্থীরা যেসব নৌকায় ঢাকা আসতেন সেগুলো সারাদিন বুড়িগঙ্গায় সারিবদ্ধভাবে নোঙ্গর করা থাকত। কখনও বৃষ্টির কারণে যথাসময়ে মিছিল শুরু করা যেত না, তবুও তাতে দর্শকের উৎসাহের কমতি ছিল না। এ মিছিলে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমরাও যোগ দিতেন। পরিতোষ সেন লিখেছেন “সক্রিয় অংশীদাররা হিন্দু হলেও আক্ষরিকভাবে এ মিছিল সর্বজনীন। ব্রিটিশ আমলে ঢাকার মেয়র জন্মাষ্টমীর মিছিলের উদ্বোধন করতেন। সেই ধারা বজায় রেখে ১৯৮৯ সাল হতে ঢাকার নির্বাচিত মেয়র মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মাধ্যমে মিছিলের উদ্বোধন করে আসছেন। বর্তমানে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুরু হওয়া জন্মাষ্টমীর মিছিল বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে একটি বিশেষ মাত্রা পেয়েছে।